মহিলা অঙ্গনে ব্যাপক আলোচিত একক-পাপড়িবিশিষ্ঠ কেন্দ্র সাদাটে/হলদে আভাযুক্ত এই নীলকন্ঠ অপরাজিতা ফুল । বৈজ্ঞানিক (Clitoria ternatea) নামের ল্যাটিন ‘Clitoria’ শব্দটি ‘Clitoris’ থেকে উদ্ভুত-আকৃতি গত সাদৃশ্যতা মনে করে `ডাচ পূর্ব ইন্ডিয়া’ কোম্পানীর উদ্ভিদবিদ রাম্ফ এরুপ নামকরন করেন । আর Ternate (মালাক্কা) হলো ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপনগরী-যা অভিযান কালে এবং যেখান থেকে জাতটি শুরু হয়েছে বলে মনে করে ১৮০০ সালে বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের সহচার্যে জার্মান উদ্ভিদবিদ জোহান ফিলিপ ternatea শব্দটি যোগ করে নামে পূর্ণতা দান করেন । এজন্য একে ‘ডারউইন ফুল’ও বলা হয়ে থাকে ।
চায়নাতে ইহা ‘মহিলাদের ঔষধী গাছ’ হিসেবে প্রচলিত । এই গাছ ভারতে লোকজ ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার মূল মন্ত্র সমুহের মধ্যে অন্যতম একটি আর তাই ভারতীয় ভাই-বোনেরা হার্টের সমস্যা-স্থুলতা-চর্মরোগ ও চুল পড়ার ক্ষেত্রে এই ফুল সরাসরি খেয়ে থাকে ।বন্ধ্যাত্ব বা বয়স্কা মহিলাদের (৪৯-৫২) মেনোপজ তথা পাহাড়ী অঞ্চলে ভার্টিগো (বিশেষ করে মহিলাদের মাথাঘোরা বা মাথা ঝিমঝিম করা) রোগের ক্ষেত্রে ইহা ব্যবহৃত হয় । মহিলাদের গলগন্ড রোগে মোটামুটি ৫ গ্রাম মূল পিষে অল্প মধু ও ঘি মিশিয়ে খেলে ভাল হয়ে যায় আর পুরনো ফুলা রোগে নীল অপরাজিতা পাতা মূল সহ বেটে অল্প গরম করে লাগালে ফুলা সেরে যায় । এই নীলকন্ঠ ফুলের ১০ গ্রাম লতা-পাতা থেঁতলে ৫ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ১ কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে ১৫ মিনিট গড়গড়া বা গারগেল করলে নারী-পুরুষ উভয়ের স্বরভঙ্গ সেরে যায় । কিশোরী তথা বিবাহযোগ্যা মেয়েদের বয়:সন্ধিকালীন উন্মাদনায় নীল অপরাজিতা মূলের ছাল ৩-৬ গ্রাম পরিমান বেটে দিনে ২ বার আতপ চাল ধোয়া পানি দিয়ে খেতে হয় ।
নীলকন্ঠ অপরাজিতা ফুল গাছ মেয়েদের মতোই দ্রুত বাড়ে । এই জাতীয় ফুল অত্যন্ত রুচিকর ও সুস্বাদু । ছোট-বড় যে কোন গেট সাঁজাতে বা টবে/ছাঁদে কিংবা বেলকোনীতে এই ফুল লাগিয়ে নয়নাভিরাম দৃশ্যপটের অবতরণ অনায়াসে সম্ভব । এই নীলকন্ঠ অপরাজিতা-এখনো কি আপনার কাছে অপরিচিতা ?