এই বথুয়া চোখে পড়লে খেতে লোভ হয় না এমনটি খুব কম মানুষের হয় । পাতার বোঁটা বেশ লম্বা তাই গাছ থেকে শাক তোলা সহজ ও আনন্দের কাজ । হেলেঞ্চা-পালংয়ের মতো বথুয়ার বয়স্ক পাতাও খাওয়া যায়-স্বাদেরও তেমন পরিবর্তন হয় না । জলনিরোধক বা ‘ওয়াটার প্রুফ’ পাতা আলোতে চিকচিক করে । শাক পানিতে ডুবিয়ে ধোয়াতেও পাতায় পানি লাগতে চায় না । বথুয়া বীজ ক্ষুদ্র হলেও জলে ভাসে না । বথুয়া বীজ ৪০ বৎসর পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে ।
আমাদের শাক-সংস্কৃতির সাথে মিশে যত্রতত্র জন্মায় বিধায় আমরা কখনো মনেই করিনি রাজহংসী বথুয়া কোনো বিদেশী বা (ইউরোপ-আমেরিকার) অতিথি উদ্ভিদ । আগাছা কাকে বলে-কেউ যদি বথুয়া চাষ করে (যেমন উত্তর ভারতে করা হয়) আর সে জমিতে গম জন্মে; সেক্ষেত্রে বথুয়া হলো ফসল-গম আগাছা । এই বৈশ্বিক আগাছা প্রজাতিটির ফসল হিসাবে গৃহপালিত হওয়ার পিছনে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস যার ফলিত অংশ হিসেবে আসুন জানা যাক রাজহংসীঁ বথুয়ার বর্তমান শোভাময় মান ও বহুমাত্রিক ব্যবহার:
প্রাকৃতিক কার্পেট:
এ শাক যেমন দ্রুত বর্ধনশীল ও মাটিতে শিকড় পুতে আস্তানা সাজিয়ে বসে কাজেই ঘন-বুননে তৈরি হতে পারে লাল গালিচাবৎ প্রাকৃতিক কার্পেট ।
আলঙ্কারিক আগাছা:
ইহা একটি আলঙ্কারিক আগাছা । এই রাজহংসীঁ জাতটি (Chenopodium gigantium) Gigantic অর্থাৎ লম্বাটে (সর্বোচ্চ ৩ মিটার) আর এ জন্য ইহাকে লাল পালং বৃক্ষও বলা হয় । মোমের প্রলেপ যুক্ত বা লোমশ মখমল সুলভ ম্যাজেন্টা পাতা আলোতে চিকচিক করে; বিশেষ করে কচি পাতায় ও পাতার নিচের দিকে ।
রুপান্তরিতলাল-বেগুণীপাতাবাহার:
রাজহংসী বথুয়ার গলা বরাবর উচ্চতায় মূল কান্ডটি কেটে ফেলুন । ক’দিন পর পার্শ্ব কান্ডগুলি আবার কাটুন ফুল আসা অবধি (প্রতিবারের কঁচি-কুঁড়িপাতা শাক হিসেবে তুলুন) যদ্বারা মূলকান্ডকে আড়াল করে চারিপার্শ্বে তৈরি হতে পারে রুপান্তরিত লাল-বেগুণীপাতাবাহার। বাকী থাকবে বাহার-যথারীতি চলবে আহার ।
বথুয়া বল:
বীজ ফেললেই ফলপ্রসু । রাজহংসী বথুয়াকে রুপান্তরিত লাল-বেগুণী পাতাবাহার বানানো বেশ সহজ । গোলাকার পার্শ্ব-কর্তনে তৈরি পারে বথুয়া বল ।
বথুয়া বর্ডার:
বথুয়া বর্ডার তৈরি কল্পে লাইন করে বীজ বুনে মোটামুটি সম দুরত্ব ও ঘনত্ব বজায় রেখে ইচ্ছেমতো বাড়তে দিন আর উপভোগ করুন লাল-লম্বাটে লাইনের নান্দনিক ডিজাইন ।
ফাঁদ ফসল:
বেগুণী উঁচু শিরা সম্বলিত কান্ডে বর্শা বা বল্লমাকৃতির পাতায় সূক্ষ্ম বুদবুদ সদৃশ স্ফীত রোম (Vescicle hair bladder) রয়েছে । আর পাতার নিচেও রয়েছে সাদাটে আস্তরণ । যে কারনে পাতায় পানি জমতে পারে না; সে কারনেই ইহা কীট-পতঙ্গের ফাঁদ ফসল ।